নিউজ ডেস্ক:
একদিন এগিয়ে ২০ নভেম্বর পর্দা উঠছে কাতার বিশ্বকাপের।এদিন কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এবারের বিশ্বকাপ। ২০ নভেম্বর রোববার আয়োজক দেশ কাতার ও ইকুয়েডরের মধ্যে একমাত্র ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে আয়োজক দেশ কিংবা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের খেলানোর যে ঐতিহ্য, তা এখানেও বজায় রইল। এদিন আর কোনো ম্যাচ রাখা হয়নি। মহাযজ্ঞের সাক্ষী হতে ফুটবলপ্রেমীরা এখন টিকিট সংগ্রহে ব্যস্ত। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে কাতারে আল বাইত স্টেডিয়ামে, দোহা থেকে যা ৪৬ কিমি উত্তরে |
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা হবে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে। আর কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী খেলা অর্থাৎ প্রথম ম্যাচ হবে আল বাইত স্টেডিয়ামে।
আল বাইত স্টেডিয়াম একটি আরবি নাম। আল বাইত কাতার বিশ্বকাপের অন্যতম স্টেডিয়াম।
কাতার বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলো বিভিন্ন আকৃতিতে নির্মাণ করা হয়েছে। আল বাইত স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজেও একটি আকৃতি থেকে নেওয়া হয়েছে।আল বায়ত দেখলে মনে হবে মস্ত বড় এক ঝিনুক।আল বাইত নির্মাণে রয়েছে শিল্পের তুলির ছোঁয়া। আবার তাবুর আকৃতিও দেয়া হয়েছে। উপসাগরীয় যাযাবরের শিয়ার বা বাইত থেকে স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে আল বাইত।স্টেডিয়ামটি ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার। একসাথে স্টেডিয়ামে বসে সরাসরি খেলা দেখতে পারবে ৬০ হাজার ফুটবল প্রেমিক।
কাতারের ৫টি শহরের ৮টি মাঠে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে; স্টেডিয়ামগুলো হল:
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম,
আল বাইত স্টেডিয়াম,
রাস আবু আবুদ স্টেডিয়াম,
আল সুমামাহ স্টেডিয়াম,
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম,
আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়াম,
খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম,
আল জানুব স্টেডিয়াম,
এবারের কাতার বিশ্বকাপে নিজ দেশের পরিচয়ে যেতে পারবেন না ইসরাইলের ফুটবল ভক্তরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে টিকিট ও হোটেল বুকিং দিতে হলে তাদের পরিচয় দিতে হবে ফিলিস্তিনের। কাতার বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি করার জন্য ফিফার কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছে ‘উইন্টারহিল হসপিটালিটি’নামে একটি কোম্পানি। তাদের অনলাইন স্টোরে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার ইসরাইলিরা। কারণ সেখানে দেশটির নাম নিবন্ধন করা হয়নি। তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চল হিসেবে।’
মুসলিম দেশগুলোর বেশিরভাগের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই ইসরাইলের। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নেই বিশ্বকাপের আয়োজক কাতারেরও। বরং ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বে কাতার বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষে। অনেক মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রের মতো, কাতারের কাছেও ইসরাইলে ফিলিস্তিনের জোরপূর্বক দখলদার একটি দেশ। যাদের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া যায় না।
তবে বিশ্বকাপ যেহেতু একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা, এখানে পুরোপুরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না আয়োজক রাষ্ট্রটি। এ বিষয়ে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার শরণাপন্ন হয় ইসরাইলে। ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটির মধ্যস্থতায় অবশ্য ফুটবল সমর্থকদের কাতার যাত্রা সহজ করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দুই দেশ। চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি সমর্থকরা নিজেদের পাসপোর্ট দিয়েই কাতারে দিয়ে বিশ্বকাপ উপভোগ করতে পারবেন। অনলাইনে ম্যাচের টিকিট কেনার পর তাদের একটি ফ্যান আইডি দেয়া হবে। সেটার মাধ্যমে তারা ফ্লাইট বুকিং, হোটেল এবং গাড়ি ভাড়া করতে পারবেন। তেল আবিব থেকে তারা সরাসরি বিমান ধরতে পারবেন কাতারের দোহায়।বৈশ্বিক এ আসরে ৩২ দলের তালিকায় যদিও ইসরাইল নাই, তারা ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা থেকে মাঠে উপস্থিত হতে চায়।
১৯৪৮ সালে ইহুদিরা ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, ইসরায়েল। তা মেনে নেয়নি ফিলিস্তিনিরা। ঘটনার জেরে শুরু হয় যুদ্ধ, যা চলছে এখনো। ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্বের অনেক দেশ। একই পথ অনুসরণ করেছে, কাতার বিশ্বকাপের টিকিট বুকিং এবং হসপিটালিটি প্যাকেজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ‘উইন্টারহিল হসপিটালিটি’। টিকিট ক্রয়ের অনলাইন স্টোরে রাখা হয়নি ইসরায়েলের নাম। তাদের উল্লেখ করা হয়েছে ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল’ হিসেবে। খবরটি নিশ্চিত করেছে স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা।
আরবসহ মুসলিম বিশ্বের ফুটবল ভক্তরা এই ঘটনার প্রশংসা করছেন। তারা এটাকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের নীরব প্রতিবাদ হিসেবে দেখছেন। ফিফা এবং কাতার সরকারকেও প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তারা।