মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে সৌদি আরবের জেদ্দায় বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের দুদিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হয়।
বৈঠকটি সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় জেদ্দায় শুরু হয়েছে।ওআইসি সদস্য দেশগুলির দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির এই মন্ত্রী পর্যায়ের সভায় তার ধরণের প্রথম, “দুর্নীতি বিরোধী আইন প্রয়োগকারী সহযোগিতায় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলির মক্কা আল-মুকাররামা কনভেনশন” খসড়ার অনুমোদন নিয়ে আলোচনা করে৷
সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। যা থেকে পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্ত নয় এবং এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও তদারকি ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্তরে জাতীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কাঠামো, উন্নত শাসন ব্যবস্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কমিউনিটি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা ইউনিট, সততার দোকান ও সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার জন্য গণশুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশকেও দুর্নীতির ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান ও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় ওআইসি ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গিকার করেন মন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে সব স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধে ফৌজদারি আইন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্যের অধিকার নিশ্চিতে তথ্য কমিশন, মানি লন্ডারিং আইন, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে পারস্পরিক আইনি সহায়তা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম প্রতিরোধসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ রোধ করা এবং বাজেয়াপ্ত সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং ফেরত দেয়ার মাধ্যমে একটি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কনভেনশনের (ইউএনসিএসি) সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে পাচার করা সম্পদ পুনরুদ্ধারে কিছু কিছু দেশের অসহযোগিতায় আইনমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
দুর্নীতি নেটওয়ার্কের অপতৎপরতা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কাঠামোর মূল দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে এবং তা মোকাবিলায় যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল ও উন্নত প্রশিক্ষণ দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ওআইসির দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন রাষ্ট্রপক্ষগুলোকে এর উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য বৃহত্তর ও দ্রুত সহযোগিতার সুযোগ দেবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমাজের সকলকে সম্পৃক্ত করে আমাদের একটি ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন সৌদি আরবের দুর্নীতিবিরোধী কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাজিন ইব্রাহিম আল কাহমুস। এছাড়া জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক, ইন্টারপোলের মহাসচিবসহ ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। সভা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে ওআইসি দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশন গৃহীত হয়। সভায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অধিবেশনে ওআইসি মহাসচিব এইচ.ই. জনাব. হিসেইন ব্রাহিম ত্বহা জোর দিয়ে বলেন যে “মক্কা আল-মুকাররামা কনভেনশন” ওআইসি সদস্য দেশগুলিতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলার জন্য একটি মূল এবং পর্যাপ্ত কাঠামো উদ্ভাবনের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ, আইন প্রয়োগ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ পুনরুদ্ধারের কার্যকর ব্যবস্থা তৈরী হবে। তিনি উল্লেখ করেছেন, এই বিষয়ে, সদস্য রাষ্ট্রগুলির এমন আইনি ব্যবস্থার প্রয়োজন যা স্বচ্ছতা, অখণ্ডতা এবং সুশাসনের নীতিগুলিকে উন্নীত করতে সাহায্য করতে পারে।
সেক্রেটারি জেনারেল ওআইসি সদস্য দেশগুলিতে দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করার জন্য ১৪ তম ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতি হিসাবে সৌদি আরবের সদয় উদ্যোগের জন্য তার আন্তরিক এবং গভীর কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলির আইনী ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে এবং বিরোধী ক্ষেত্রে তাদের আকাঙ্খা ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সঙ্গতি রেখে “মক্কা আল-মুকাররামা কনভেনশন” স্বাক্ষর ও অনুমোদনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার আহ্বান জানান।