আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের আশার আলো দেখাচ্ছেন করোনাভাইরাসের টিকার আবিষ্কারক তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলিম জার্মান দম্পতি উগুর শাহিন ও ওজলেম তুরেসি। তারা বলছেন, ২০৩০ সালের আগেই মরণব্যাধি ক্যানসারের টিকা পাওয়া সম্ভব।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী দম্পতি উগুর সাহিন ও ওজলেম তুরেসি বলেছেন, তাদের গবেষণার কাজ এ আশা সৃষ্টি করেছ যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ক্যানসারের টিকা সহজলভ্য হবে। এই দম্পতিই এমআরএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার করে ফাইজারের সহযোগিতায় বায়োএনটেকের যুগান্তকারী করোনাভাইরাসের টিকা তৈরি করেন।
‘মহামারিতে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনার টিকা আবিষ্কার এবং সাফল্যই “আমাদের ক্যানসারের কাজে ফিরিয়ে নিয়েছে”- জানান সাহিন ও তুরেসি।
বিবিসির সানডে অনুষ্ঠানে লরা কুয়েন্সবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই দম্পতি জানান, কীভাবে করোনার টিকা আবিষ্কারে ব্যবহৃত এমআরএনএ প্রযুক্তি ক্যানসারের টিকা আবিষ্কারে সহযোগিতা করেছে।
এমআরএনএ প্রযুক্তির ব্যবহার করে তৈরি ক্যানসারের টিকা কবে নাগাদ রোগীর ব্যবহারের উপযোগী হবে, সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক সাহিন বলেন, ‘এটা ২০৩০ সালের আগেই হয়ে যাবে।’
একই অনুষ্ঠানে তুরেসি বলেন, ক্যানসারের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে একই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। যেখানে রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থা ক্যানসারের সেলকে নষ্ট করে ফেলে।
ক্যানসারের টিকা তৈরির জন্য বায়োএনটেক কয়েক দশক ধরে কাজ করছে। তবে কোভিড–১৯ সংক্রমণ শুরু হলে তারা এর টিকা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির এখন একাধিক ক্যানসারের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে।
তুরেসি বলেন, ‘এখন কোভিড-১৯–এর টিকা এবং এটি তৈরি করতে গিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা ক্যানসারের টিকা আবিষ্কারের কাজকে গতিশীল করছে। আমরা শিখেছি কীভাবে আরও ভালো, আরও দ্রুত টিকা তৈরি করা যায়। আমরা বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে ইমিউন সিস্টেম কীভাবে এমআরএনএর প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটি শিখেছি। করোনার টিকা আবিষ্কার নিয়ন্ত্রকদের এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হয়, সে সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে।’
তিনি আরও বলেন, এটি অবশ্যই আমাদের ক্যানসারের টিকা তৈরির গতিকেও ত্বরান্বিত করবে। এই দম্পতি ক্যানসারের টিকা আবিষ্কারের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও সতর্ক করেছেন।
তুরেসি জানান, ‘বিজ্ঞানী হিসেবে এটা বলতে আমরা সব সময় দ্বিধান্বিত যে আমাদের কাছে ক্যানসার সারানোর দাওয়াই আছে। তবে আমাদের অনেকগুলো ভালো অর্জন আছে। আর আমরা সেগুলোর ওপর কাজ চালিয়ে যাব।’
২০০৮ সালে শাহিন ও তুরেসি নিজস্ব ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি বায়ো-এনটেক প্রতিষ্ঠা করেন। জার্মানির প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের সাথে মিলে ‘ফাইজার-বায়োএনটেক’ নামে করোনার প্রথম টিকা আবিষ্কার করে।
তুরস্ক থেকে জার্মানিতে ১৯৬০-এর দশকে আসা অভিবাসী পরিবারে শাহিন ও তুরেসি জন্ম নেন। চিকিৎসা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে ক্যানসার চিকিৎসা, আণবিক জীববিদ্যা ও টিকা প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণায় একত্রে সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন তারা।