জয় ভিশন ডেস্ক:
বৈশ্বিক ভিডিও গেমের বাজারের মধ্যে চীনের বাজার বৃহত্তম। চীনা ভিডিও গেম প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি এশিয়ার গেমের বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে। চীনা কোম্পানি টেনসেন্ট বর্তমানে ভিডিও গেমের বৈশ্বিক বাজারের অন্যতম শীর্ষ নেতা। পৃথিবীর বহু দেশে নিজেদের পণ্য রপ্তানি করে টেনসেন্ট।
ভিডিও গেমের এই রমরমা বাণিজ্য পরিস্থিতি সত্বেও খোদ নিজ দেশের তরুণ সমাজের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব, সময়ের অপচয় সাথে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির তরুণ সমাজ। তাই ভিডিও গেমিংয়ে কঠোর নীতি আরোপ করেছে চীন সরকার।
ভিডিওগেমের বাজারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রথম পদক্ষেপ বেইজিং নিয়েছিল ২০২১ সালে। ওই বছর আইনে বলা হয়েছিল, ১৮ বছরের কম কেবল তারাই ভিডিওগেম খেলতে পারবে। শুক্রবার, রোববার এবং ছুটির দিনগুলোতে ভিডিও গেম খেলা যাবে। পাশপাশি বলা হয়, দিনে কোনোভাবেই এক ঘণ্টার বেশি গেম খেলা যাবে না। নতুন আইনটিও ২০২১ সালের আইনের ধারবাহিকতাতে এসেছে বলে জানিয়েছে ন্যাশনাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনপিপিএ)। ওই বছর গেমিং আসক্তি নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে প্রায় আট মাসের জন্য নতুন ভিডিও গেমের অনুমোদন স্থগিত করেছিল চীন সরকার।
শুক্রবারের এ সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবার নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে শেয়ারবাজারে চীনের দুটি বৃহৎ গেমিং কোম্পানির বাজারমূল্য প্রায় ৮০ বিলিয়ন বা ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলার কমে গেছে। বিশ্বের বৃহত্তম গেমিং কোম্পানি টেনসেন্ট হোল্ডিংসের শেয়ার এক ধাক্কায় প্রায় ১৬ শতাংশ কমে গেছে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নেটইজের শেয়ারের দাম কমেছে ২৫ শতাংশ। টেনসেন্ট কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিগো ঝ্যাং অবশ্য জানিয়েছেন, সরকার কোনো নতুন আইন বা নিয়ম প্রণয়ন করলে তা বিনা আপত্তিতে বাস্তবায়ন করবে তাদের কোম্পানি।
এছাড়া চীনের কঠোর খসড়া নীতি বিশ্বব্যাপী গেমিং স্টকগুলোতেও ছায়া ফেলেছে। ইউএস গেমিং স্টক রোবলক্স, ইলেকট্রনিক আর্টস এবং ইউনিটি সফটওয়্যারের শেয়ারদর গতকাল শুক্রবার ১ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে কমেছে। যেখানে ইউরোপে ফরাসি ভিডিও গেম প্রস্তুতকারী সংস্থা ইউবিসফটের শেয়ারদর ৩ শতাংশেরও বেশি নেমেছে।
নতুন নিয়মে অবশ্য এমন একটি প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা এ শিল্পখাত সংশ্লিষ্টরা ব্যাপকভাবে স্বাগত জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেটি হলো—নিয়ন্ত্রকদের ৬০ দিনের মধ্যে নতুন গেমের অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
চীনা প্রশাসন নতুন নিয়মের বিষয়ে জনসাধারণের মতামত দেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখবে।
(এনপিপিএ) বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, নতুন এই আইনের লক্ষ্য ভিডিও গেমের কেনাবেচা, বিশেষ করে লোকজনকে আসক্ত করে ফেলে— এমন সব গেমের ক্রয়-বিক্রয় এবং জাতির নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে— এমন গেম কন্টেন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করা।
এনপিপিএর এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘আপাতত কেবল ভিডিও গেমের দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, তবে অনলাইন গেমগুলোও আমাদের নজরদারির আওতায় রয়েছে। আমাদের মূল কথা হলো— ভিডিওগেম বা অনলাইন গেম মূলত অবসর কাটানোর জন্য; কিন্তু বর্তমানে গেমগুলো এমনভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে, যে যারা গেম খেলছেন তারা অল্প সময়ের মধ্যেই আসক্ত হয়ে যাচ্ছেন।’
পার্লামেন্টে এমপিদের ভোটের পর তা চূড়ান্ত আইনে পরিণত হবে।