নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। মাত্র এই দূরত্বে সেখানে গরুর গোস্ত পাওয়া যায় মাত্র ২০০-২৫০ টাকায়। এবারের কলকাতার পশুর হাটগুলোতে মাঝারি আকৃতির দেশি গরু মিলছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে।
ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। একে ভারতে বকরা ঈদও বলা হয়। বৃহস্পতিবার, ২৯শে জুন ত্যাগ আর উৎসবের মিশেলে গোটা বিশ্বের সঙ্গে ঈদুল আজহা পালন করবেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। বহুকাল ধরে পশ্চিমবঙ্গে এই পর্ব অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই হয়ে আসছে।
প্রশাসন চাইছে, এবারও তার ব্যতিক্রম যেন না হয়। এবারও ঈদ হোক উৎসবের, আনন্দের। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বজায় থাকুক সাম্য ও ঐক্য।
কিন্তু, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের সহিংসতা এবং একটানা বৃষ্টিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে রাজ্যজুড়ে পশুর হাটগুলোতে। ব্যতিক্রম শুধু কলকাতা। কারণ, শহর পঞ্চায়েতমুক্ত। তবে এখানেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বৃষ্টি। তার ওপর এবার শহরের ভেতরে সেভাবে অনুমতি নেই অস্থায়ী পশুর হাটের।
শহরের সড়ক পরিষ্কার রাখার লক্ষ্যে কলকাতার একটু বাইরে বসেছে অস্থায়ী পশুর হাটগুলো। মূলত, বিক্রির জন্য কয়েকদিন ধরে রাজপথে পশু থাকার কারণে প্রচুর মলমূত্র ছড়িয়ে থাকে। যার ফলে শহরের সাফাই কর্মীরা ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। এ সমস্যার জন্যই একপ্রকার শহরের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাটগুলো। এখনো পুরোপুরি সরানো না গেলেও, পরের বছর থেকে আর শহরে বসবে না পশুর হাট।
এবারের অস্থায়ী দেশি গরুর হাটগুলোতে শেষবেলায় জমে উঠেছে বেচাকেনা। এসব হাটে দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার রুপির মধ্যে। ঠিক মতো দর করতে পারলে অনেকক্ষেত্রে ১৫ হাজারেও মিলছে গরু।
পাশাপাশি ভিন জাতের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে আকার এবং মান অনুযায়ী। যদিও এগুলোর একটাও পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশে চাষ হয় না। সব আসে ভিন রাজ্য থেকে। তবে এগুলোর এবার বিশেষ চাহিদা নেই। এজন্য বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন অনেকে। ফলে চাহিদা বেশি দেশি গরুর। দামও সাধ্যের মধ্যে, বিলানোর পর মাংসের পরিমাণ যথেষ্ট ভালোই থাকবে পরিবারের জন্য। এমনটাই মনে করছেন পশু কিনতে আসা শাকিল আহমেদ।
বিক্রেতাদের মতে, এবারে দেশি গরুর প্রজনন ভালো হয়েছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী পশুর সংখ্যা বেশিই।
অপরদিকে, চাহিদা না থাকলেও মোটের ওপর ভালোই বিক্রি হচ্ছে উট এবং দুম্বা। একটু উচ্চবিত্ত মুসলিম পরিবারগুলোর কাছে বেশি পছন্দ উন্নত জাতের দুম্বা ও খাসি। একটি ভালো ওজনদার দুম্বা ৭০ থেকে ৮০ হাজার রুপিতে বিক্রি হচ্ছে।ফলে সবকিছু ভুলে কোরবানি উপলক্ষ্যে শেষ বেলায় জমে উঠেছে কলকাতার পশুর হাটগুলো।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দু’হাজার দুশ’ সতের কিলোমিটারের। এরমধ্যে পাঁচশ চুয়াত্তর কিলোমিটারই অরক্ষিত। কাঁটাতারের বেড়াও দেওয়া যায়নি এই পাঁচশ চুয়াত্তর কিলোমিটার এলাকায়। অরক্ষিত এই সীমান্ত দিয়েই দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ থেকে নিয়মিত গরু পাচার হয় বাংলাদেশে। পাচার হয় পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং পশ্চিম-উত্তরপ্রদেশ থেকেও। একটা সময় ছিল যখন তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তান তথা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের গরুর মাংসের চাহিদা মেটাতে পারতো পশ্চিমবঙ্গ। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এখনও এই চাহিদা যোগান দেওয়ার মতো স্বনির্ভর হয়নি বাংলাদেশ।
আইনানুগ পদ্ধতিতে যে পরিমাণ গরুর মাংস রপ্তানি করে ভারত তা অপর্যাপ্ত। তাই, ভারতীয় গরু পাচার হয় চোরাপথে। বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে ভারত থেকে অবাধে গরু আনার ব্যবস্থা করাটা জরুরী। আশা করি সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।
বাংলাদেশ এখন ৬৫০টাকা কেজি দামে গরুর মাংস কেনে যা রাজধানী থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে ইন্ডিয়াতে প্রায় ২৫০ টাকা । যেখানে দু’দেশই লাভবান হতে পারত, সেখানে দু-দেশই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । বাংলাদেশে পর্যাপ্ত গুচারণ ভূমি নেই, তাই মাংস উৎপাদনে স্বাবলম্বী হতে পারলেও উৎপাদন খরচ কমাতে পারেনি । ভারতে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় দাম কম। অন্যদিকে বাংলাদেশে উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি বলে এখানে গরুর মাংসের দাম বেশি। চড়া দামের কারণে নিম্ন ও নিম্নবিত্তরা এখন গরুর মাংস খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। মাঝারি আয়ের সংসারগুলোতে মাঝে-মধ্যে গরুর মাংস খাওয়া এখন দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রতি বছর কোরবানির গরুর দাম অত্যধিক থাকে। কারণ হিসেবে খামারিরা বলেন, গরু লালন-পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। সরকারি হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে গরুর উৎপাদন ছিল দুই কোটি ৪৭ লাখ। এ ছাড়া কোরবানি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন খামারে ও ব্যক্তিগতভাবে অনেক খামারি গরু উৎপাদন করে থাকেন। আবার দেশীয় গরুর খামার ও চামড়া রক্ষার স্বার্থে সরকার ভারতীয় গরু আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ফলে দেশীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগানের ঘাটতি থাকায় গরুর মাংসের দাম বেড়েছে— এমন দাবি গরুর ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে ভারত থেকে অবাধে গরু আনার ব্যবস্থা করাটা জরুরী। আশা করি সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।