জয় ভিশন অনলাইন:
দুর্নীতির অভিযোগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বদলি, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসরসহ কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়, ক্ষেত্রবিশেষে তা দুর্নীতিকে উৎসাহ প্রদান করে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
অন্য সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইনি প্রক্রিয়ায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রোববার এ কথা জানিয়েছে টিআইবি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে যে দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তাকে বদলি বা বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে। যা বিভাগীয় পদক্ষেপ হিসেবে আশাব্যঞ্জক প্রথম পদক্ষেপ উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই তাকে বদলি করা, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মতো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাকেই স্বাভাবিকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতির জন্য কার্যকর জবাবদিহিতা ও প্রতিরোধের সম্ভাবনার মানদণ্ডে যা একেবারেই যথেষ্ট নয়। দুর্নীতির মতো অপরাধ বদলির মাধ্যমে বড়জোর স্থানান্তরিত ও আরো বেশি প্রসারিত এবং অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি করে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দুর্নীতি করলে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না-এমন ধারণা প্রসারের মাধ্যমে তা দুর্নীতিকে অধিকতর উৎসাহ দেয়।’
বিভিন্ন সময়ে সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা শিথিল করে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের প্রকারন্তরে এক ধরনের সুরক্ষা কবচ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘দুর্নীতির দায়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র বিভাগীয় ব্যবস্থাগ্রহণের মাধ্যমে দায় শেষ করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনও বটে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ অনুযায়ী, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের শাস্তি শুধুমাত্র বদলি, বরখাস্ত ও অবসর প্রদানে সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে অন্য সকল শ্রেণি-পেশার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের পরিচায়ক ও সরকারি খাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও জোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতির বিকাশের অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেলায়ও অন্য সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য দেশের প্রচলিত আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দুর্নীতির প্রকটতর উদাহরণসমূহের দায় রাজনৈতিকভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকতার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একাংশ স্বীকার করলেও, তাদের অনেকেই এই দুর্নীতির দায় ঢালাওভাবে শুধু সরকারি কর্মচারীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু উচ্চপর্যায়ের এই দুর্নীতি অনেক ক্ষেত্রেই যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয়, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। অন্যদিকে, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির অন্যতম কারণ যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, তার দায়ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মূলত বারবার সরকারের শীর্ষ অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূণ্য সহনশীলতা নীতির কথা বলা হলেও, তা যে শুধুমাত্র ফাঁকা বুলি-জনমনে গেঁথে যাওয়া এমন ধারণা থেকে উত্তরণের দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি।