নিজস্ব সংবাদদাতা:
আজ শুক্রবার (১৯ মে) মধ্য রাত থেকে ২৩ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং এ উদ্যোগ সফল করতে এক সপ্তাহব্যাপী প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন জায়গায় মতবিনিময়ের সভা করা হয়।
বঙ্গোপসাগরের জলসীমায় সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য প্রশাসন।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মৎস্যজীবী, মৎস্য ব্যবসায়ী, ট্রলার ও নৌকা মালিক, জেলে, আড়তদার এবং বরফকল মালিকদের নিয়ে মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুর, কুয়াকাটা, গঙ্গামতি, চাড়িপাড়া, ঢোস, দেবপুর ও পাটুয়াসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে জনসচেতনতামূলক সভা হয়। ঘোষিত ৬৫ দিনের সরকারের অভিযান সফল করতে সভায় অংশগ্রহণকারীরা মাছ আহরণ ও বিপনন থেকে বিরত থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার এমনিতেই তারা মাছ পায়নি। বিভিন্ন ধার দেনায় জর্জরিত। বয়ে যাওয়া মোখায় সবাই সপ্তাহ ধরে বসে বসে খেয়েছে। মোখা চলে যাওয়ার পর কিছু কিছু মাছ ধরার ট্রলার সাগরে মাছ শিকারে গেলেও ফিরে এলো শূন্য হাতে। ওই সকল জেলেদের পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মাঝে। এক দিকে পরিবারের মুখে ভাতের ব্যবস্থা করা অন্যদিকে ঋণের বোঝা।
তারা দাবি করে বলেন, আমরা অবরোধ সময় যে পরিমাণে চাল পাই তা সামান্য। অবরোধকালীন সময় আমরা অন্য কোনো কাজ করতে পারিনা। হয় আমাদের জন্য ভিন্ন পেশার ব্যবস্থা করা, না হয় বাড়তি চালের ব্যবস্থা করা হোক।
মহিপুরের নজীবপুরের সোহেল নাজীর বলেন, অবরোধ সময় আমরা শুয়ে বসে সময় পার করি। আর ফাঁকা মাঠে গোল দেয় ভারতীয় জেলেরা। আমাদের অবরোধ আর তাদের কোনো অবরোধ নেই।
গঙ্গামতির জেলে মো: ছলেমান বলেন, ‘মাত্র ৬৫ কেজি চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অথচ আমাদের কত খরচ সংসারে। অবরোধ দিলে পুরো সাগরই ফ্রি থাকবে কিন্তু সাগরে ভারতের জেলেরা মাছ ধরে আরামে। এগুলো সরকার কেন দেহেনা।’
কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধিত ১৮ হাজার ৩৫০ জন জেলেকে ৪২ কর্মদিবসের জন্য মোট ৫৬ কেজি চাল ও বাকি ২৩ কর্মদিবসের জন্য মোট ৩০ কেজি চাল প্রদান করা হবে। শুধু সাগরে মাছ ধরায় নিষেধ আছে। এ সময় তারা বিভিন্ন নদ নদীতে মাছ ধরতে পারবে।
এই দীর্ঘসময় বঙ্গোপসাগরের কোনো স্থানেই যান্ত্রিক এমনকি ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা দিয়েও মাছ আহরণ করা যাবে না। ফলে উল্লিখিত এলাকায় কোনো ট্রলার কিংবা দাঁড়বাহী নৌকা মাছ ধরতে গেলেই আইনি ঝামেলার মুখোমুখি হতে হবে। ৬৫ দিন গভীর সমুদ্রগামী ফিশিং ভ্যাসেল এর সাথে উপকূলীয় ইলিশ শিকারী ইঞ্জিন চালিত কাঠের ট্রলারে ৬৫ দিন অবরোধ দেয়ায় বেকার হয়ে পরেছে বরগুনা সহ দক্ষিণ অঞ্চলের কয়েক লাখ জেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা জেলার মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ মানুষই মৎস্য ব্যবসার সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত। দেশের বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনা পাথরঘাটা হওয়াতে বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম এলাকার ট্রলার মালিকরা এখান থেকে তাদের মৎস্য ব্যবসা পরিচালনা করেন। জৈষ্ঠ্য মাস থেকে শুরু করে আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে ইলিশ মৌসুম। ইতিমধ্যে ট্রলার মালিকরা তাদের ট্রলার মেরামত করিয়েছেন। আড়ৎদারা তাদের দিয়েছে দাদন। হাজার হাজার ট্রলার সমুদ্রর যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকলেও বছরের শুরুতে ৬৫ দিনের অবরোধ দেওয়াতে যেতে সাগরে যেতে পারছে না। এতে কয়েকলক্ষ জেলে হয়ে পরেছে বেকার।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধের কারণে যাতে সাধারণ জেলে, মাঝি-মাল্লারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের আওতায় আনা হবে। যে কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা সরকারের কাছ থেকে রেশনিং সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া নানা সহায়তা দেওয়া হতে পারে। যাতে তাঁরা মাছ ধরতে না গিয়ে সাগরের মৎস্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করেন।