দুর্নীতিবাজদের ‘আজব’ সংবাদ সম্মেলন দুদকের কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে হয়রানি, নির্যাতন, গ্রেফতার ও ঘুস দাবির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চট্টগ্রামের দুর্নীতি অভিযুক্ত কয়েক ব্যাক্তি। বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়া কর্ণফুলী গ্যাসের ইঞ্জিনিয়ার সরওয়ার, আরএফ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ারসহ সবার বিরুদ্ধেই দুদকের একাধিক মামলা চলমান আছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী গ্যাস কেজিসিএল লিমিটেডের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাও। কক্সবাজারের আলোচিত আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির হোতা আরএফ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার হোসেনের উপস্থিতি নতুন আলোচনার জন্ম দেয় সংবাদ সম্মেলনে। হাজী দেলোয়ার চেক প্রতারণা, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই কারণে সাংবাদিকদের জেরার মুখে তিনি প্রেসক্লাব চত্বর ত্যাগ করে তড়িঘড়ি করে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিের জিএম ইন্জিনিয়ার সরওয়ার অভিযোগ করেন, ‘ চাকরীচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন তার চাকরি জীবনে নিজের প্রভাব দেখিয়ে কৈবল্যদাম আবাসিক এলাকায় হরিদাস বাবু থেকে নিজের শাশুড়ীর নামে জমি ক্রয় করেছেন। ‘
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ২০১৬ সালে হরিদাস বাবু’কে নির্যাতনের অভিযোগ ছয় বছর পরে কেন করা হচ্ছে – সেই বিষয়ে কোন জবাব দিতে পারেন নি তিনি। শরীফ উদ্দিনের বিয়ে কবে করেছেন ; সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করতে পারেন নি সংবাদ সম্মেলনের আয়োযকরা অভিযোগ করা হয়, শরীফ উদ্দিনের জুলুমের শিকার হয়ে হরিদাশ তার জমিটি ২০১৯ সালে বাজার মুল্যের অর্ধেক দামে শরীফের শ্বাশুড়ি রোকেয়া বেগমের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। এই বিষয়ে প্রশাসনের কোন সংসার কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন নি ইন্জিনিয়ার সরওয়ার।
এক ব্যক্তির নামের গ্যাসের চুলা কীভাবে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হলো, সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সরোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
জানা যায়, নিজের প্লট বিক্রি করে হরিদাস বর্তমানে ছেলের কাছে মালেশিয়া অবস্থান করছেন। বিদেশে অবস্থান করা হরিদাস বাবুকে ভুক্তভোগী সাজিয়ে উত্থাপিত সব অভিযোগই দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের শ্বশুর বাড়ির বিরুদ্ধে।
কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী নেজাম উদ্দিনকে মৌখিকভাবে মামলার ভয় দেখিয়ে পঁয়ষট্টি লাখ টাকা নেয়া অভিযোগ তোলা হয় শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তবে সেই ভুক্তভোগীও উপস্থিত ছিলেন না সংবাদ সম্মেলনে।
লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, ভূমিদস্যুতা ও মাদক নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ করার কোন এখতিয়ার নেই।
যাদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন :
আরএফ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার :
কক্সবাজারের বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্পের নামে দুইশো কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে হাজী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। সম্পদ গোপনের মামলায় হাজী দেলোয়ারের স্ত্রী-পুত্রের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান রয়েছে। হোটেল ওয়েসিস, হোয়াইট স্যান্ড, গোল্ডেন স্যান্ড, পার্ল অব পানামা, ওয়াল্ড ভিউসহ বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রকল্পের নামে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি। একাধিকবার জেলও কেটেছেন তিনি।২০১৫ সালে এইসব ফ্লাট ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও অদ্যবধি কোন ফ্লাট বা ফ্লাটের দলিল হস্তান্তর করেন নাই। এই নিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের কাছে কিছুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন। এই বিষয়ে সাংবাদিকগণ হাজী দেলোয়ারকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ফ্লাট বুঝিয়ে দেয়ার কাজ চলছে।
সানোয়ারা গ্রুপের জিএম ফজলুল হক :
সানোয়ারা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং সাবেক প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তার ছেলে মুজিবুর রহমান সানোয়ারা গ্রুপের এমডি। অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেয়ার দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলাও হয় প্রতিষ্ঠানটি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে।
কর্ণফুলী গ্যাসের জিএম ইন্জিনিয়ার সরওয়ার :
২০২১ সালের ১০ ই জুন চট্টগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেওয়ার অভিযোগের মামলায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মো. সরওয়ার হোসেনসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সার্ভেয়ার দিদার :
সার্ভেয়ার দিদার, কর্ণফুলী গ্যাসের জিএম ইন্জিনিয়ার সরওয়ার হোসেনের সাথে অবৈধ গ্যাস সংযোগের মামলার আসামী।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে (দুদক) চাকরিচ্যুত উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বলেন, হালিশহরের নুর জাহান নামের এক নারীর সই জাল করে তাঁর ১২টি চুলা চান্দগাঁওয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলের নামে স্থানান্তর করেন সরোয়ার। নিয়ম অনুযায়ী, একই ব্যক্তি তাঁর নামে থাকা চুলা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে পারবেন। কিন্তু তা অন্য ব্যক্তিকে হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে গত বছরের জুনে সরোয়ার, কেজিডিসিএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, ট্রান্সমিশন বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলম ও গ্রাহক মুজিবুর রহমানকে আসামি করে মামলা হয়। অনুসন্ধানে সত্যতা মেলায় দুদক অনুমোদন দেওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এখানে ব্যক্তিগত আক্রোশের কিছুই নেই।শরীফ আরও বলেন, তাঁর কী সম্পদ আছে, তা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে পারে। দুর্নীতি করলে আজকে তাঁকে দোকানের কর্মী হিসেবে চাকরি করতে হতো না। ভাই শিহাবের শিক্ষাগত যোগ্যতার সব কাগজপত্র সঠিক বলে দাবি করেন শরীফ। তিনি বলেন, সম্প্রতি চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁর ভাই পোষ্য কোটায় রেলওয়েতে যোগদানের অপেক্ষায় রয়েছেন। আর তাঁর কোনো খালাতো ভাই গাড়িচালক হিসেবে কেজিডিসিএলে নেই।