নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল আগামী দিনে তেল, আটা, ময়দাসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য, পোলট্রি ব্যবসার পাশাপাশি মোবাইল ফোন উৎপাদনে আসছে। এছাড়া গার্মেন্টস, জুতা, গ্লাসওয়্যারসহ বিভিন্ন খাতে বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে আরও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এজন্য প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিল্পগ্রুপ। নতুন করে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এরই মধ্যে সয়াবিন বীজ প্রসেসিং ও তেল পরিশোধন, আটা, লবণ, ডাল, স্টার্চ, ফিডমিলসহ কয়েকটি পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে গাজীপুরের মুক্তারপুরে কালীগঞ্জ অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড (কেএপিএল) নামে নতুন একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরির কাজ করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। ১৮০ বিঘা আয়তনের এ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এখন স্থাপনা নির্মাণ ও মেশিন বসানোর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ থেকে এ কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বাজারে আসতে পারে।
নরসিংদীতে অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে স্মার্ট ও ফিচার ফোনের পাশাপাশি হেডফোন, ব্যাটারি, চার্জারসহ বিভিন্ন ধরনের মোবাইল অ্যাকসেসরিজ উৎপাদন করবে আরএফএল গ্রুপ। আগামী মার্চেই নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত প্রোটন ব্র্যান্ডের এসব ফোন ক্রেতাদের হাতে আসতে পারে। এজন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।
দেশের উত্তরবঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়িতে এবার গার্মেন্টস কারখানা করছে প্রাণ গ্রুপ। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এ কারখানার উদ্বোধন করা হতে পারে। এখানে বিভিন্ন ধরনের অন্তর্বাস ও পোলো শার্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। যেখানে গ্রামীণ নারীরাও কাজের সুযোগ পাবেন।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) কক্সবাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন চড়াই-উতরাইয়ের গল্প শোনান গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল। সেই সঙ্গে তুলে ধরেন আগামীদিনের ব্যবসার বিভিন্ন দিক। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান ও ম্যানেজার মাকছুদ উল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র জনগণের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি ও কৃষিকাজে সেচের পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে টিউবওয়েল ও কৃষিসহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরির মাধ্যমে ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (আরএফএল) মাধ্যমে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের যাত্রা শুরু। পরে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে মনোনিবেশ করে এবং ১৯৯৩ সালে নরসিংদীতে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার জন্য একটি কারখানা স্থাপন করা হয়। এরপর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ড্রিংকস, সস, জেলি, চানাচুর, চিপস, মসলা, চকলেট, বেকারি, ফ্রোজেন ফুডস, টয়লেট্রিজ, দুগ্ধজাত পণ্য, হাউজওয়্যার, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার মাধ্যমে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ হয়ে ওঠে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
কামরুজ্জামান কামাল বলেন, শুরুটা ছিল বেশ কঠিন। রংপুর বিসিকে ছোট একটি কারখানা দিয়ে স্বল্প বিনিয়োগ নিয়ে আমাদের পথচলা শুরু। তবে সেসময় আমাদের টিউবওয়েল ও কৃষিসহায়ক যন্ত্রপাতি গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য বড় ভূমিকা রাখে। পরে নরসিংদীতে ক্ষুদ্র আকারে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা চালু হলো, যেখানে আনারস প্রসেসিং করা হতো। এরপর একে একে ম্যাংগো ড্রিংকস ও অন্যান্য পণ্য আসা শুরু করে। সেই প্রাণের ঝুড়িতে এখন অসংখ্য পণ্য, যা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই ‘প্রাণ’ এখন দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের প্রাণ হয়ে উঠেছে।
কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, আমাদের গ্রুপের প্রধান লক্ষ্য ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন। আমরা এখন যতগুলো কারখানা করছি সবগুলোই ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। আমরা চেষ্টা করছি শ্রমঘন শিল্পগুলো ঢাকার বাইরে স্থাপন করা। আমরা দেখেছি দেশের বেশিরভাগ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি রাজধানী ও তার আশপাশের শহরগুলোতে। কিন্তু এ গার্মেন্টস আমরা উত্তরাঞ্চলে স্থাপন শুরু করেছি। আমরা আশা করছি, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এ উদ্যোগ দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
আগামীদিনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, দেশে ভোগ্যপণ্যের বিশাল বাজারের বড় অংশে রয়েছে ভোজ্যতেল, আটা, ময়দা, সুজি, ডাল, চিনি, লবণ। তবে আপাতত চিনি ছাড়া সব ধরনের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে প্রাণ গ্রুপ। এজন্য গাজীপুরের মুক্তারপুরে নতুন কারখানা হচ্ছে। এছাড়া কয়েক মাসের মধ্যে প্রোটন ব্র্যান্ডে মোবাইল উৎপাদন শুরু হবে। পাশাপাশি জুতা, গ্লাসওয়্যার ও পোলট্রি শিল্প খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।