ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছের লোক আব্রামোভিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য, এরপর আর আব্রামোভিচ চেলসির মালিকানা রাখবেন কি না, সে নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। আজ আব্রামোভিচ নিজেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন, ক্লাবটা বিক্রি করে দিচ্ছেন।
২০০৩ সালে চেলসির মালিকানা কিনেছিলেন রোমান আব্রামোভিচ। তার মালিকানায় গত ১৯ বছরে ৬টি লীগ ও দুটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জিতেছে চেলসি। এর আগে চেলসির ঝুলিতে ছিল শুধু একটি প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা। দল বদলের বাজারে বাজিমাত করে টিম ব্লুজের চেহারা পাল্টে দেয়া এই রুশ ধনকুবের এখন নিজের ক্লাবেই ব্রাত্য! ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান সংকটে যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিনের কাছের লোক আব্রামোভিচ। যেকারণে দুদিন আগে চেলসির দেখাশোনার দায়িত্ব ক্লাবটির দাতব্য ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের ওপর ছেড়ে দেন তিনি। এবার ক্লাব বিক্রি করার ঘোষণা দিলেন আব্রামোভিচ।
শুধু তা-ই নয়, চেলসিকে বিভিন্ন মেয়াদে দেওয়া ধার বাবদ ১৫০ কোটি পাউন্ড পাওনা ছিল তাঁর। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ১৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকারও বেশি! এই অঙ্কের পাওনাও মাফ করে দিয়েছেন আব্রামোভিচ। রুশ ধনকুবের এটাও বলছেন, চেলসি বিক্রি করে যে আয় হবে, সেটি দিয়ে দেবেন ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে দাতব্য কাজে!
চেলসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে আজ আব্রামোভিচ লিখেছেন, ‘আমার চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিকানা নিয়ে গত কয়েকদিনে সংবাদমাধ্যমে চলতে থাকা গুঞ্জন নিয়ে কথা বলতে চাই। আগেও যেটা বলেছি, সব সময়ই যেটাতে ক্লাবের জন্য সবচেয়ে ভালো হয়, সেটা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্লাবটি বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ আমার মনে হয়েছে এটাই ক্লাব, এর সমর্থক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ক্লাবের স্পনসর ও অংশীদারদের জন্য সবচেয়ে ভালো।’
সুইজারল্যান্ডের দৈনিক ব্লিকে সুইস ধনকুবের হানসিয়র্গ ভাইস বলেন, তাঁকে চেলসি ক্লাবটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই আব্রামোভিচের চেলসি বিক্রি করে দেওয়ার গুঞ্জন বেশি ছড়ায়।
তবে ক্লাব বিক্রির প্রক্রিয়ায় তড়িঘড়ি না করে যথাযথ নিয়ম মেনেই করা হবে বলে জানিয়ে রেখেছেন আব্রামোভিচ। এর সঙ্গে এল সব পাওনা মওকুফ করে দেওয়ার ঘোষণা, ‘আমি কোনো ধার ফেরত চাইব না। আমার কাছে এই ক্লাবটা কখনোই ব্যবসা বা অর্থের ব্যাপার ছিল না, পুরোটুকুতেই আবেগ জড়িয়ে ছিল এই ক্লাবটার জন্য।’
ক্লাব বিক্রি করে পাওয়া অর্থ ইউক্রেনে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়ার ঘোষণাও থাকল, ‘আমি আমার টিমকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে একটা দাতব্য ফাউন্ডেশন গড়ে নে, যেখানে বিক্রি থেকে পাওয়া সব অর্থ দান করে দেওয়া হবে। এই ফাউন্ডেশন হবে ইউক্রেনে যুদ্ধের শিকার সবার সাহায্যের জন্য। এই সাহায্যের মধ্যে যুদ্ধের শিকার মানুষের জরুরি ও তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জরুরি তহবিল যেমন থাকবে, তেমনি যুদ্ধপরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠনে সাহায্যের জন্য তহবিলও থাকবে।’
চেলসিকে কিনে নেওয়ার পর ক্লাবটাকে তো বটেই, ইংল্যান্ড ও ইউরোপের ফুটবলের খোলনলচেও বদলে দিয়েছেন আব্রামোভিচ। বিশেষ করে দলবদলের বাজারের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন তিনি।