অনলাইন রিপোর্ট:
করোনা মহামরিতে কয়েক মাস রেমিট্যান্সে ধীর গতি থাকলেও গেল মার্চে তা ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে।পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১৮৬ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার সমান ৮৬ টাকা হিসাবে) ১৫ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। আগের মাসের চেয়ে ২৪ শতাংশ বা ৩৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বেশি। গত ৮ মাসের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স। রমজানে পরিবারের বাড়তি ব্যয়ের চাহিদা মেটাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশি পরিমাণে অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স ছিল ১৪৯ কোটি ডলার।
ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার সম্প্রতি প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা ২ শতাংশের পরিবর্তে আড়াই শতাংশে উন্নীত করেছে। এতে বৈধ পথে দেশে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এ ছাড়া রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রবাসীরা পরিবারের জন্য অর্থ পাঠাচ্ছেন। প্রবাসীদের আয় বাড়ছে, আগামীতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা)। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০১ কোটি ডলার কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮৩১ কোটি ডলার বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের টানা পাঁচ মাস কমার পর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়ের গতি কিছুটা বেড়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারিতে আবারও ধস নামে। ফেব্রুয়ারিতে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চে ১৮৬ কোটি ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৩ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ৩ কোটি ডলার। অন্যটিতে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৮৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
বরাবরের মতো বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। মার্চে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৯ কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকে এসেছে ২৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ কোটি ১৬ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছিলো সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পেতেন সুবিধাভোগী।তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রেমিট্যান্স দেশে আনতে প্রণোদনা সুবিধা বাড়িয়েছে সরকার।প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠালে এখন থেকে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন।
বাংলাদেশে বেশীরভাগ রেমিট্যান্সই আসে মধ্যপ্রাচ্যে থেকে। নগদ প্রণোদনা, নানা উদ্যোগ ও ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রবাসীরা।