নামাজের সুন্নাত একান্নটি (৫১)। তন্মধ্যে:
* দাঁড়ানোর মধ্যে ১১টি সুন্নাত।
* কিরাতে ৭টি সুন্নাত।
* রুকুতে ৮টি সুন্নাত।
* সিজদায় ১২টি সুন্নাত এবং
* বৈঠকে ১৩টি সুন্নাত রয়েছে।
নামাজের আরবি শব্দ হলো সালাত। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজকে ঈমানের পরেই স্থান দিয়েছেন।রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে বার বার নামাজের তাগিদ পেয়েছেন। আল-কুরআনে আল্লাহ্ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি ৮২ বার সালাত উল্লেখ করে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
নামাজের গুরুত্ব ও ফায়েদা সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামগণ অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলো-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘ (হে আল্লাহর রাসুল!) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি’? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘নামাজ’। (বুখারি ও মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিস বর্ণনা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার আল্লামা মোল্লা আলি ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘এ হাদিসের মাধ্যমেই আলেমগণ ঈমানের পর নামাজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেন’।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা মনোনীত সর্বোত্তম আমল হলো নামাজ। অতএব যে বেশি বেশি নামাজ পড়তে সক্ষম, সে যেন বেশি বেশি নামাজ পড়ে’। (তাবারানি)
নামাজ পড়া ফরজ। যেভাবে খুশী সেভাবে নামাজ পড়া যাবে না।
রাসুলে পাক (সা.) তিনি বলেছেন, “তোমরা আমার মতো নামাজ পড়ো।”
নামাজে দাঁড়ানোর অবস্থায় এগারটি সুন্নাত:
১। তাকবীরে তাহরীমার সময় সোজা হয়ে দাঁড়ানো অর্থাৎ মাথা ঝুকাবে না। (আল-বাহরুর রায়েক- খ: ১, পৃ: ৩০২) সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা। (আল-বাহরুর রায়েক- খ: ১, পৃ: ৩০৪)।
২। উভয় পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল পরিমান ফাঁক রাখা এবং পায়ের আঙ্গুল কিবলার দিকে রাখা। (ফাতহুল কাদীর খ: ১, পৃ: ২৫৮)।
৩। মুক্তাদীর তাকবীরে তাহরীমা ঈমামের সাথে হওয়া (বাদাইউসসায়ে- খ: ১, প: ২০০)।
৪। তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানো (বাদাইউস সানায়ে- খ: ১, পৃ: ১৯৯) ।
৫। হাতের তালু কিবলার দিকে রাখা (আল-বাহরুর রায়েক খ; ১, পৃ: ৩০২)।
৬। আঙ্গুলগুলো আপন অবস্থায় রাখা অর্থাৎ না বেশি ভালো রাখবে, না বেশি বন্ধ। (আদদুররুল মুখতার- খ: ১, পৃ: ৪৭৪)।
৭। ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের উপর রাখবে। (ফাতওয়া তাতার খানিয়া- খ: ১, পৃ: ৫৩১)।
৮। কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গলীর দ্বারা হালকা বানিয়ে কব্জিকে ধরা। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া- খ: ১, পৃ: ৭৩)
৯। নাভির নিচে হাত বাঁধা। (তাবইনুল হাকাইক খ: ১, পৃ: ১০৭)।
১০। সানা পড়া (হিদায়াহ- খ: ১, পৃ: ১০২)।
কিরাতের সুন্নাত সাতটি:
১। তাআউজ অর্থাৎ আউজুবিল্লাহিমিনাশ শাইত্বয়ানির রাজিম পড়া। (বাদাইউস সানায়ে- খ: ১, পৃ: ২০২)।
২। তাসমিয়া অর্থাৎ বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম পড়া। (আল বাহরুর রায়েক- খ: ১, পৃ: ৩১২)।
৩। চুপে চুপে আমীন বলা। (আল ফিকহ্ আলাল মাজাহিবিল আরবাআ- খ: ১, পৃ: ২৫০)।
৪। ফজর ও জোহার তিওয়ালে মুফাসসাল, অর্তাৎ সূরায়ে হুজরাত থেকে সূরায়ে বুরুজ পর্যন্ত: আসর ও ঈশায় আওসাতে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরায়ে বুরুজ থেকে সূরায়ে বাইয়্যেনাত পর্যন্ত: মাগরিব নামাজে কিসারে মুফাসসাল অর্থাৎ সূরায়ে যিলযাল থেকে সূরায়ে নাস পর্যন্ত সূরাসমূহ পড়া। (হিদায়া খ: ১, পৃ: ১১৯)। (আল-বাহরুররায়েক- খ:১, পৃ: ৩৪০)।
৫। ফজরের প্রথম রাকাআত লম্বা করা। (বাদাইউস সানায়ে- খ: ১, পৃ: ২০৬)।
৬। না বেশি দ্রæত, না বেশি ধীরগতিতে বরং মধ্যম গতিতে পড়া অর্থাৎ না তারতীর না হাদও বরং তাদভীরের সাথে তিলাওয়াত করা। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া- খ: ১, পৃ: ৪৫৬)।
৭। ফরয নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়া। (হিদায়া- খ: ১, পৃ: ১১১)।
রুকুর সুন্নাত ৮টি:
১।রুকুতে তাকবির বলা (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ২০৭)
২।রুকুতে উভয় হাত হাঁটুতে ধরা। (আল-বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩১৫)
৩।হাঁটু ধরার সময় আঙুলগুলোকে ফাঁক করে রাখা। (হিদায়া-খ. ১, পৃ. ১০৬)
৪।পায়ের গোছাকে সোজা রাখা। (আল ফিকহ্ আলাল মাজাহিবিল আরবাআ-খ. ১, পৃ. ২৫৮)
৫।পিঠকে বিছিয়ে দেওয়া। (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ২০৮)
৬। মাথা ও নিতম্বকে বরাবর রাখা। (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ২০৮)
৭। রুকুতে কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়া। (হিদায়া-খ. ১, পৃ. ১০৬)
৮। রুকু থেকে উঠার সময় ইমামের ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলা, মুক্তাদির ‘রাব্বানা লাকাল হামদ্’ বলা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩১৬)
সিজদার সুন্নাত ১২টি:
১।সিজদার তাকবির বলা। (আল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবাআ-খ. ১, পৃ. ২৪২)
২।সিজদায় প্রথমে উভয় হাঁটু রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩১৭)
৩।তারপর উভয় হাত রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩১৭)
৪।তারপর নাক রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩১৭)
৫।তারপর কপাল রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩১৭)
৬।উভয় হাতের মাঝে সিজদা করা (আসসি’আয়াহ-খ. ২, পৃ. ১৯৫)
৭।সিজদায় পেটকে ঊরু থেকে পৃথক রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩২০)
৮।বাহুদ্বয়কে বগল থেকে পৃথক রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩২০)
৯। কনুইকে জমিন থেকে পৃথক রাখা। (আল ফিকহুল ইসলামী-খ. ১, পৃ. ৭০৭)
১০।সিজদায় কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ পড়া (সিআয়াত-খ. ১, পৃ. ১৯৮)
১১। সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবির বলা। (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ২১০)
১২। সিজদা থেকে উঠার সময় প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর দুই হাত, তারপর হাঁটু উঠানো এবং উভয় সিজদার মাঝে স্থিরভাবে বসা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ১১৭)
বসার সুন্নাত ১৩টি:
১।ডান পা খাড়া রাখা, বাঁ পা বিছিয়ে তার ওপর বসা, উভয় পায়ের আঙুলকে যথাসম্ভব কিবলামুখী রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩২৩)
২।উভয় হাত ঊরুর ওপর রাখা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩২৩)
৩।তাশাহ্হুদের মধ্যে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা’-এর ওপর শাহাদাত আঙুলকে ওপরের দিকে উঁচু করা এবং ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় ঝুঁকিয়ে দেওয়া। (রদ্দুল মুহতার-খ. ১, পৃ. ৫০৮)
৪।শেষ বৈঠকে দরুদ শরিফ পড়া। (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ২১৩)
৫।দরুদ শরিফের পর দোয়ায়ে মাসুরা পড়া। (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ৭১২)
৬।উভয় দিকে সালাম ফিরানো। (আল ফিক্বহুল ইসলামী-খ. ১, পৃ. ৭২৪)
৭।সালামকে ডান দিকে থেকে আরম্ভ করা। (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ২১৪)
৮।ইমামের সালামে ফিরিশতা, নেককার জিন ও ডান-বামে মুক্তাদিদের নিয়ত করা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩৩২)
৯।মুক্তাদিদের সালামে ইমাম, ফিরিশতাগণ, নেককার জিনদের ও ডান-বামের মক্তাদিদের নিয়ত করা। (আল ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবাআ-খ. ১, পৃ. ২৪৩)
১০।একাকী নামাজির কেবল ফিরিশতাদের নিয়ত করা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩৩৩)
১১।মুক্তাদিদের ইমামের সঙ্গে সঙ্গে সালাম ফিরানো। (বাদাইউস সানায়ে’-খ. ১, পৃ. ২২৪)
১২।দ্বিতীয় সালামের আওয়াজকে প্রথম সালামের তুলনায় নিচু করা। (আল বাহরুর রায়েক-খ. ১, পৃ. ৩৩২)
১৩।মাসবুকের (যার নামাজের শুরুতে কিছু ছুটে গেছে) ইমামের ফারেগ হওয়ার অপেক্ষা করা। (আল ফিকহুল ইসলামী-খ. ১, পৃ. ৭২৬)
উল্লেখ্য, রুকুতে হাতের আঙুল ছড়িয়ে সিজদায় মিলিয়ে বাকি আরকানে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে।
(দুররুল মুখতার ৩২৬/১, বাহরুর রায়েক ২৯৫/১)
সূত্র ও সৌজন্যে: মাসিক চরিত্র।
তত্ত্বাবধানে: মোঃ আবু বকর সিদ্দিক
অফিস সুপার
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন
ঢাকা, বাংলাদেশ।
মোবাইল: ০১৭৩৯-১১৮১১১।